বাজার নিয়ে বিড়ম্বনা
লম্বা বিরতির মধ্যেই ঘটনা ঘটায় ফেলছি। বিশ্ব যখন উত্তপ্ত রাশিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে। বিশ্বযুদ্ধের আসংকায় যখন পাড়া-মহল্লা, হোটেল-রেস্তরাঁ, গ্রামের টং দোকান গুলোতে ময়মরুব্বি ছৈল পৈল সবাই যখন এক একজন সমরবিশারদ। তখন আমি কামটা ঘটায় ফেলছি। শেষ না হওয়া এক মহা যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছি।
২২-২-২২ এই দুক্লা তারিখটা ইনতেখাম করেছিলাম নিজেকে দুক্লা করার জন্য। লেকিন এই দুক্লা সব কিছুই যে দুক্লা করেদিবে সেটা তো কথা ছিল না। আমি যুদ্ধে নামার সাথে সাথেই গোলা বারুদের দাম উর্ধমুখী শুরু হতে শুরু করলো। সয়াবিন তেলের দাম ২০০ হয়ে গেলো, গরীবের দেশি মুরগী নামে খ্যাত পাকিস্থানী মুরগী ২২০ হতে এক লাফে হয়ে গিয়েছিল ২৭০ টাকা। গরুর মাংস ৫২০ থেকে হয়ে গেলো ৬০০ টাকা। যাক গে যা হবার হয়েছে।
নতুন নতন বিয়ে করে বাজার করার দায়িত্ব পরেছে ঘারে। ব্যাগ হাতে প্রথমেই গেলাম মাংসের বাজারে। টাটকা টাটকা বড় বড় গরুর রান, সিনার মাংস ঝুলে আছে । ক্রেতারা ভীর করে কিনছে। মজা কইরা কসাইরে কইলাম ঐ জুম্মান কসাই গরুর মাংস কত করে। কেজি প্রতি দর শুনে আমি তো আসমান হতে পরলাম। ভাবতেই পারছিলাম না। কানটা একটু আগায়া দিয়া আবার জিগাইলাম কত? কসাই চাপর দিয়া মাংসের উপর একটা কোপ দিয়া আবার কইলো ৩৫০ টাকা। আমি আবার কইলাম ধুর ও মিয়া মরা গরু নাকি? কসাই চোখ দুটো বড় বড় করে তাকাইলো আমার দিকে। বুঝতে পারলাম না সবাই ভীর করে নিতেছে মাংস। মনের খুশিতে কইলাম দাম হাঠাৎ পরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কসাইয়ের সাফ সাফ জবাব সবই উপ্পর ওয়ালার ইচ্ছা। আপনে কত টুকু নিবেন কোন।
দুই কেজি।
খাশির মাংসের দিকে শেষ কবে চোখ ফিরেছি তাও মনে নেই। সাহস করে একটু টু মারলাম। অদ্ভুত ব্যাপার সেপার। খাশির মাংস ৪৫০ টাকা কেজি!! দেরি না করেই দিলাম হোম মিনিস্টারকে ফোন। প্রথমেই কইলাম তুমি আমার সংসারে আইসা আমার কপাল খুইলা দিছ। সব কিছু শোনার পর পরামর্শ দিল ৪/৫ কেজি খাশির মাংস কেনার। সামনে রমজান মাস এটাও স্মরণ করে দিল।
পকেটের অবস্থাও খুব একটা ছিল না তাই বিকাশে টাকা রিজার্ভ করলাম। বাজারের এমন রমরমা অবস্থা কত দিন থেকে যে দেখি নাই। সব কিছুই সুখকর অবস্থা। লিস্টে যা নাই তাও আজ ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যাবো নিয়ত করলাম।
সয়াবিন তেল ৪০ টাকা, সরিষার তেল ৪৫ টাকা, চিনি ৩৫ টাকা, লবন ১০ টাকা, বড় লাক্স সাবান ১৫ টাকা, আটা ১৩ টাকা, চাল ২২ টাকা, আলু ৫ টাকা, পেয়াজ ৬ টাকা, রসুন ৭ টাকা, হলুদ ৩৫ টাকা কি যে আর বলবো। আহা! বাজারের মতো এতো শান্তির জায়গা আর কোথাও কি আছে?
ব্যাগ ভরে গেছে দুই টাকা দিয়ে আরেকটা ব্যাগ কিনলাম। মাছটা কেন বাদ যায়। যদিও আমি মাছ খাই না। যাক সুখ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে। ব্যাগ ভর্তি মাছ। আপনার চয়েস শেষ হয়ে যাবে মাছ শেষ হবে না।
আহা! রুপালি ইলিশ কত দিন তোমারে ছুয়ে দেখার সাহস পাই নিই। আজ একটু বেশিই ঝিলিক মারছে। এক কেজি সাইজের একটা ইলিশ ২৫০ টাকা। দুই কেজি নিয়ে নিলাম। বোয়াল ২০০ টাকা, দেশি সিংগি ১৫০ টাকা। আর কিছু মাছ নিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে নিলাম।
বাজার করতে অনেকটা হাঁপিয়ে গেলাম। পাশের একটা চা দোকানে এক কাপ রং চা খেয়ে নিলাম। মনের খুশিতে কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেয়ে দোকানীকে ১০ টাকা নোট দিয়ে পানের বোটায় চুন নিচ্ছিলাম। দোকানদার ৮ টাকা ফেরত দিল।
চা-পানতো ১০ টাকাই জানি। সেই দিন গেছে গা স্যার।
এখন বাসায় ফেরার পালা। ব্যাগ ভর্তি বাজার আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে রিক্সা ড্রাইভার কে ডাকলাম। কোন মতে ব্যাগ গুলো তুলে পান চাবাইতে চাবাইতে বাজার জয় করার মত ভাব নিয়ে রিক্সায় বসলাম। রিক্সার গতি আর রাস্তার দূর্গতির খাল গর্তের ঝাঁকুনিতে ব্যাগ সহ মুখ থুবরে পরতেই বউ হাজির।
বউ কয় দিন দুপুরে কি এমন স্বপ্ন দেখলেন যে খুশির ঠেলায় বিছানা হতে পরে গেলেন।
ততক্ষণে মাগরিবের আজান মসজিদের মাইক হতে ভেষে আসছে।
আসেন কানটা আগায় দেন। আপনার কানে কানে একটা সত্য কথা কই। বিয়ে না বহুত মজা। একবার কইরা দেখেন। তারপর বুঝবেন কেমন মজা।
Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON