বেকারত্ব
বেকারত্বে একটি ছেলের জীবন কিভাবে চলতে পারে। নিজের প্রথম লাইনেই আমি ভুল খুঁজে পেলাম। কোন ছেলের নাম উচ্চারণ না করে তার নামের আগে বেকারত্বের পদবী যোগ করে দিলাম। এটা আমার ভুল নাকি অভ্যাস। আমার এখনো মনে আছে আমার ভাইয়ের বেকারত্বের একটি বছর। একটি স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র সকালে ভাই নিজের কম্বলটি খানিকটা টেনে নেয়। পাখিরা যখন তাঁর ঘুম ভাঙ্গাতে ব্যস্ত, সে ঘড়ির টাইম দেখে আবারো কম্বলের নিচে মুখ গুঁজে সময় কাটাতে ব্যস্ত ছিল। যেখানে আমার বাবার কাছে ভাইয়ের সকালে ঘুম থেকে না উঠতে পারার ব্যর্থতা চোখে পড়তো । সেখানে ভাই নিজের সময় কাটানোর জন্য বিছানাটা কেই বেছে নিয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করার প্রায় দুই তিন মাস পরে তার একটি চাকরি হয়।
যদিও সে চাকরির মধ্যে কোন আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণটা ছিল, তার প্রথম দিন চাকরিতে জয়েন করার পরই তাকে সেই চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়। সেটা সাধারণ একটি এনজিওর চাকরি ছিল। যেখানে আমার ভাইকে বিমার জন্য মানুষকে যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু আমার ভাইয়ের কোন ভাবেই সম্ভব ছিলনা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লোক জোগাড় করা বিমার জন্য। অতঃপর আর কি যেটা ঘটার কথা ছিল, সেটাই ঘটেছিল। প্রথম দিনেই চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ভাইয়ার ভীষণ রাগ হয়েছিল। কিন্তু কার উপর সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল না। আবারও সময় কাটাতে শুরু করে ঘরের চার দেয়ালে, আর নিউজ পেপারে চাকরির বিজ্ঞপ্তি গুলোর দিকে চোখ রেখে। প্রতিদিনই কয়েকটা চাকরির বিজ্ঞপ্তি তে এপ্লাই করা হতো।
কিন্তু সেটার জন্য বাবার কাছে টাকা চাইতে হত। কোন চাকরিতে ৫০০-১০০০ টাকার নিচে অ্যাপ্লাই করা যেত না। একটা বেকার ছেলের কাছে ৫০০ টাকা দিয়ে কোন চাকরিতে এপ্লাই করা এটা এক ধরনের জুলুম ছিল তার প্রতি। এটা সবাই বুঝতে না পারলেও বেকারত্ব যারা জীবন পার করছে তারা ঠিক বুঝতে পারে। একটা সময়ে ভাইয়া নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত হতে থাকে । আমার মা ভাইয়াকে সব সময় সমর্থন দিলেও, বাবার কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই চাকরির কথা শুনতে হত। তার প্রেক্ষিতে আমার ভাই কখনোই বাবাকে কোন উত্তর দিতে পারেনি। শুধু সবসময় এটাই বলেছিল, একদিন আমার মনের মত একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাব। তখন তোমরা সবাই আর আমার দোষ দিতে পারবে না।
বেকারত্বের একটা বছর তার উপর চাপ ছিল। পরিবারের বড় ছেলে বলে কথা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। একটা বছর পর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দের দিন চলে এসেছিল। এটা আমার পরিবারের জন্য এবং বিশেষ করে আমার ভাইয়ের জন্য সবথেকে আনন্দের মুহূর্ত ছিল, সেই দিনটি যখন সে একটি ভালো চাকরিতে যুক্ত হতে পেরেছিল। মুহুর্তের মধ্যে ভাইয়ের জীবনটা পাল্টে যায়। তখন বুঝতে পেরেছিলাম একটা ছেলের জীবনে একটা চাকরির গুরুত্ব কতটা বেশি। এটা শুধু আমার পরিবারের গল্প নয় । এটা প্রতিটা পরিবারের একটি ছেলের গল্প । যেখানে ছোটবেলা থেকেই দায়িত্ব নেওয়ার কথা শেখানো হয়।
আমরা যে দেশে বসবাস করছি, সেখানে সরকারি চাকরি তাড়া কেউ কাউকে চেনে না। কিছু দিন আগেই নিজের এক বন্ধুর সরকারি চাকরি হয়। তার সোশ্যাল প্রোফাইলে সবার শুভেচ্ছার বন্যা বয়েছিল। একদিনের মধ্যেই তার ফেসবুক প্রোফাইলে ফলোয়ার দ্বিগুন বেড়ে গেল। ঠিক একই সাথে যখন আমি অনলাইনে একটি চাকরির কথা লিখেছিলাম, তখন আমার এই কথাকে সবাই উপেক্ষা করে । কেউ শুভেচ্ছা জানাবে তো অনেক পরের কথা সেই সেই বার্তার মধ্যে একটি লাইক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। এখন বুঝতে পারি মানুষ সরকারি চাকরিকে কেন সোনার হরিণের সাথে তুলনা দেয়। যার কাছে সোনার হরিণ আছে তারি হয়তো এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
Congratulations @shahinaubl! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 900 replies.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
আল্লাহ রহমতে এই পরিস্থিতি এখনো ফেইস করতে হয়নি কিন্তু ওইযে চাকরি তাও আবার সরকারি চাকরি নিয়ে যা মাতামাতি ওইটা হয়তো ফেইস করা লাগতে পারে। তবে আমাদের এই বয়সে বেকার ছেলেদের সামাজিক ও পারিবারিক কি একটা বাজে পরিস্তিতির মাঝে দিয়ে যেতে হয় তা আমার আশেপাশের কয়েকজনকে দেখে বেশ উপলব্ধি করতে পেরেছি।
আমরা শুধু উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু এটা আসলে কতটা কষ্টের শুধু উপলব্ধি করে হয়তো বোঝা কঠিন। আর বাংলাদেশের মানুষ সরকারি চাকরি ছাড়া আর কোন কিছুই বোঝে না। আপনি যত টাকা রোজগার করেন না কেন দেখবেন যে সরকারি চাকরি না করলে সেটার মূল্য দিতে চায় না।
মুক্তিযোদ্ধা কোঁটাও নেই যে কিছুটা বাড়তি সুবিধা নেওয়া যাবে, তাদের কারণে আরো শেষ।