প্রেমিকার হাত------- (পার্ট ১ )

avatar

প্রেমিকার হাত


istockphoto-883034378-170667a.jpg

source


বন্ধুরা আমাকে অনেক বলল তাদের সাথে সিলেটের ট্যুরে যেতে। কিন্তু বরাবরের মতো আমার পরিবার আমাকে বন্ধুদের সাথে যেতে দিবে না। মন খারাপ করে আমি বসে আছি, পকেটের টাকা আছে কিন্তু পরিবারের জন্য বন্ধুদের সাথে কোথাও যেতে পারি না।

যত দিন যাচ্ছে বন্ধুদের মধ্যে ট্যুরে যাওয়ার উত্তেজনা বাড়ছে। বন্ধুরা আমাকে সাথে নিয়েই ট্যুরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছে। শাকিল রাব্বি নতুন জুতা আর কিছু শার্ট প্যান্ট কিনলো। বাকি রইল সবুজ এবং নিলয় তারা শুধু টি-শার্ট এবং প্যান্ট কিনলো। সেখানে গিয়ে তারা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে এবং কিভাবে আনন্দ করবে সেই প্লান গুলো যখন আমার সামনে করছিল তখন আমার মনটা একটু খারাপ হল।

কিন্তু বন্ধুদের বুঝতে দেয়া যাবে না। হাসিমুখেই আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসলাম। পরিবার যেমন শাসন করে তেমনি ভালো ও বাসে ।নিজেকে এই সান্তনা দিয়েই রেখেছি, এটি আমার জন্য প্রথমবার নয়, আরো বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে আমার সাথে। এখন আর খারাপ লাগে না , লাগলেও তেমন কিছু করার থাকেনা।

সকালে বন্ধুরা বাসে করে রওনা হল। ওই সকালে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল। আমার যেন ঘুমই হচ্ছিল না । বিছানার এপাশ ওপাশ করতে থাকলাম। এখন শুধু অপেক্ষা বন্ধুরা ফেসবুকে তাদের ছবি পোস্ট করবে এবং আমি সেই পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেবো।

দুইদিন ট্যুরে থাকার পর তৃতীয় দিন বন্ধুরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে, ঐদিন আমার ছোট খালু সিলেটের এক সরকারি কোয়ার্টারে থাকার সুযোগ পাবেন। দুই মাস অপেক্ষার পর তিনি কোয়াটারে থাকার সুযোগ পেলেন। আমার খালু চাচ্ছেন আজ তার পরিবারসহ ঢাকা থেকে সিলেট চলে আসার জন্য এবং তাদের সাথে আমিও যেন সিলেটি যায়।

মনে মনে খুশি হলাম আবার আমার খারাপ লাগছে বন্ধুরা চলে আসবে আর আমি এখন যাব। যদি আর দুদিন আগে হত। তাহলে হয়তো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে পারতাম।

তবে অনেকদিন পর আমি যে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি এতেই আমি খুশি। তবে আমি ঘুরতে যাচ্ছি না, খালা খালুর ঘরের জিনিসপত্র গুছাতে সাহায্য করার জন্য যাচ্ছি। তাদের জিনিসপত্র গোছগাছ করতে 2 দিন লেগে যায়, দুদিন পর আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

বাস এর আমার পাশের সিটে একজন মুরুব্বী বসেছেন এবং আমার অপজিট পাশে একটা জুটি বসে আছে। ছেলেটা তার প্রেমিকার হাত ধরে রেখেছে, কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল তবুও ছেলেটি একবারের জন্যও তার প্রেমিকার হাত ছাড়ে নি। দেখে মনে হচ্ছে যেন গভীর প্রেম।

বাসের অন্য মানুষ রা তাদের দিকে একটু খারাপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সবাই কেন যেন তাদের দিকেই নজর রাখছে, যেন তারা অনেক বড় অপরাধ করেছে। সত্যি বলতে কেন যেন আমারও খুব কৌতুহল হচ্ছে তাদের সম্পর্কে জানার।

কিন্তু তাদের দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল, এবং আমিও লাজুক স্বভাবের আর অপরিচিত মানুষের সাথে এভাবে কথা বলা যায় না। তাই আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছি। মাঝে মাঝে কৌতুহল চোখে বারবার ছেলেটার দিকে দেখছি, কি আছে তার প্রেমিকার হাতে, যে হাত ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায়।

আমার পাশের মুরুব্বী আমাকে শুনিয়ে আস্তে আস্তে বলতে লাগল, আজ কালকার ছেলে মেয়ে ভদ্রতা শেখে নি। এতগুলো মানুষের সামনে কিভাবে মেয়েটার হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটারও একটু বিবেক বুদ্ধি নেই। আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে আছি।

বেশ কয়েক ঘন্টা বাস চলার পর, একটি জায়গায় বাস থামল। তখন দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। বাস কিছু সময়ের জন্য এখানে থামবে, সবাই যেন খাওয়া-দাওয়া করে নেয়। পাশেই একটি বড় হোটেল ছিল। সবাই বাস থেকে নামল, হোটেলের দিকে গেল দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। বাস থেকে সবাই নামলেও ওই জুটি দুজন দিব্যি বসে আছে। হয়তো এখনও তার প্রেমিকার হাত ধরে।



0
0
0.000
0 comments