জীবনের নাটকীয়তা
মা মরা ছেলে চঞ্চল, ছেলেটা খুবই একা হয়ে পরল। তার খোঁজ খবর, যত্ন নেয়ার মতো তেমন আপন কেউ আর নেই। যদিও তার মা'ই তার সব আবদার পূরণ করতো, অগোছানো ছেলেটাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখতো, যেন মামা বাড়ি থাকার দরুন কেউ তার ছেলেকে বকাঝকা না করতে পারে। যদিও সে এতোটা গুছানো ছিল না, তবুও যথেষ্ট চেষ্টা করে তার রুমের সবকিছু গুছিয়ে রাখত আগের মতো এলোমেলো জীবন যেমন যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাওয়া থেকে বেরিয়ে এসে, সুন্দরভাবে চলার চেষ্টা করে যাতে তার মামারা তাকে বকাঝকা না করতে পারে। তবুও সে ত ছোটই, বয়স আর কত! কয়েকদিনের মধ্যে ত আর সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারে না, একটু কিছু ভুলের জন্য ও তার মা মারা যাওয়ার পর তার মামারা তাকে বকাঝকা করে।
সে আর কি করবে?! করার কিছুই থাকে না তার, শুধু মন খারাপ হলে নিজের রুমে গিয়ে তার বিছানার তোসকের নিচ থেকে তার রাখা ডায়েরি বের করে সব কষ্ট এক এক করে লিখতে থাকে, আর মায়ের ছবিতে চোখ বোলায়। প্রতিদিন বিকাল হলেই সে তার মায়ের কবরের পাশে গিয়ে একা একা বসে থাকে৷ আর সারাদিনের যত অভিযোগ সব একচেটিয়ে তার মাকে বলতে থাকে। সে মনে করে তার মা কবর থেকে কোনো কথা বলতে না পারলেও তার সব কথা শোনে।
এভাবেই কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর, হঠাৎ একদিন তার সাথে ঘটে এক ভয়ানক ঘটনা। রাত তখন প্রায় এগারোটা বাজে সে রাতের খাবার খেয়ে তার পড়ার টেবিলে পড়তে বসলে হঠাৎ বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। আর এই কারনে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে সারা ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। আর বাইরে ঝড়ো হাওয়ার কারনে লোহার মেইন গেইটটি একটির সাথে অপরটি ধাক্কা লেগে বিকট শব্দ করতে থাকে। তার মামা চিৎকার দিয়ে তাকে বলে মেইনগেইটি ভালো করে লাগাতে।
সে তার মামার ভয়েই অন্ধকারের মাঝেই কোনো লাইট না নিয়েই কোনো রকমে দেয়ালে ধরে ধরে গেইট পর্যন্ত যায়। আর সেখানে যাওয়া মাত্রই ঝড়ো এক বাতাসে মেইনগেইট খুলে গিয়ে তার মাথায় বাড়ি খায়। প্রচন্ড জোড়ে সে মাথায় আঘাত পায় এবং সাথে সাথে মেঝেতে পড়ে যায়। কোনোরকমে মেঝেতে থেকে উঠে মেইন গেইটে তালা লাগিয়ে সে তার বিছানায় গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মাথায় যে জায়গায় আঘাত পেয়েছিলো গতরাতে, সে অংশটা ভীষণ ফুলে গেছে। সাথে সাথে সে মাথায় পানি দিলো, বরফ দিলো কিন্তু কিছুতেই সে ফুলা কইতেছিল না।
বাইরে বের হলে, তার মামারা তার অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করে, কপালে কি হয়েছে৷ সে তার তেমন কিছু না বলে, ভয়ে ভয়ে কিছু একটা বলে কোনো রকমে সেজায়গা থেকে কেটে পড়ে। সে মনে করেছিলো কিছুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু না সময় যত যেতে থাকে তার অবস্থা তত দিনকে দিন খারাপই হতে থাকে। তার পায়ে হাটুতে হঠাৎ সমস্যা ধরা পরে। প্রথম কয়েকদিন সে লুকিয়ে রেখেছিল তার মামাদের কাছ থেকে, পরে কয়েদিন পর আর হাটতেই পারতেছিল না পরে তার মামারা সব জানতে পারে এবং তাকে ডাক্তার দেখাতে গেলে তার পায়ের হাড়ে ইনফেকশন ধরা পড়ে।
কয়েকদিন চিকিৎসা করে ভালো অংকের টাকাই খরচ হয়ে যায় তাদের। তবুও কিছুতেই সে ভালো হচ্ছিলো না, অবশেষে সে শুনতে পায় তার মামিরা তার মৃত্যুর জন্য দোয়া করতেছিল। এ অসুস্থতার কারনে সে তার জেএসসি পরিক্ষাও দিতে পারে নি। হঠাৎ একদিন ডাক্তার বলল তার ডান পা কেটে ফেলতে হবে যদি তাকে বাচাতে চায়৷ কারন দিনকে দিন ইনফেকশন বাড়তেছেই। তারা অসম্মতি জানায় আর যাইহোক পা বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তারা ডাক্তারই পরিবর্তন করে ফেলে। অবশেষে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ছেলেটির পা ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে এবং অবশেষে বছর দুই প্রচুর কষ্ট করার পর সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
জীবন মাঝে মাঝে নাটকের নাটকীয়তাকেও হার মানায়। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় এবং অপ্রত্যাশিত।
Congratulations @riazud! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 21000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!