দোলার দীঘি সেচে মাছ ধরা

avatar

আসসালামু আলাইকুম
আশাকরি সকলে ভালো আছেন, গত পরশুদিন আমাদের পুকুরের পানি সেচা হয়, আমরা মূলত এটাকে "দোলার দীঘি" কি বলে থাকি। দোলা হল,একাধিক জমির মধ্যে একটি নদীর লাইন থাকে, সে নদীর লাইন অর্থাৎ যেখানে পানি জমা হয়, মানে একটু নিচু জমি। এই জমিগুলোতে চাষ করা সম্ভব হয় না কারণ সব সময় পানি থাকে, তাই এই জমিতে পুকুর খনন করা হয়। এবং সব জায়গা থেকে মাছ আসে এই পুকুরে ।

IMG20211218104850.jpg
উপরের ছবিটিতে দেখুন এটাই হলো সেই দোলার দিঘি অর্থাৎ পুকুর।
এখানে আমাদের একটি পুকুরে ভাগ রয়েছে। পাশাপাশি এখানে মোট ৪টি পুকুর রয়েছে।
এই যে দেখতে পাচ্ছেন এটাতেই আমাদের ভাগ রয়েছে এটা , এটাতে গত দুইদিন ধরে পানি সেচা হয়েছিল স্যালো মেশিনের মাধ্যমে। এটা প্রতিবছর এভাবেই করা হয় সো আমরা বুঝতে পারি যে সকাল-সকাল গুড়া মাছ পাওয়া যাবে এবং দুপুরের মধ্যেই সকল কাজ শেষ হবে।
আমি এই দিঘি তে গিয়েছিলাম সকাল ১০ টার সময়। দীঘিটির দূরত্ব আমার বাসা থেকে প্রায় ২০ মিনিটের পথ, এটা দেখতে খুব কাছে হলেও জমির মধ্য দিয়ে যেতে অনেকক্ষণ সময় লাগে। তারপর সেখানে গিয়ে দেখি এখনো কিছুটা পানি ছিল।

IMG20211218111502.jpg
উপরের ছবিটিতে দেখতে পারতেছেন অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছিল এবং এতে একটি স্যালো মেশিন এবং জাল দেখা যাচ্ছে।
আরেকটু কাছে গেলাম

IMG20211218112146.jpg
এই ছবিটি দেখতে পারতেছেন স্যালো মেশিনের পরিচালনায় দুইজন লোক কর্মরত রয়েছেন। দিঘির পানি যেহেতু শেষের দিকে সেহেতু বারবার এই স্যালোমেশিন দেখা হচ্ছিল যাতে করে এই মেশিনটি ভাল মত চলে।

IMG20211218111549.jpg
উপরের ছবিটিতে দেখতে পারতেছেন এই স্যালো মেশিনের মাধ্যমে শুধু পানি উঠছে তা নয় পাশাপাশি গুঁড়া মাছ ছিল। এইভাবে সারা রাত ই গুঁড়া মাছ উঠেছিল এবং সেটা আমরা সকালে পেয়েছিলাম। দেখতে পারতেছেন গ্রাম বাংলার সুন্দর গুড়া মাছের ছবি। এগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না কারণ বাজারে আমরা বড় মাছ ই অধিকাংশ সময় পেয়ে থাকি।

IMG20211218111514.jpg

এবার তাহলে অপেক্ষার পালা শেষ,অল্প পানি থাকা অবস্থাতেই সবাই পুকুরে নেমে পড়ল। কোন সময়ে প্রায় এগারোটা।
একটা বিষয় আগেই বলে রাখি, এই দিঘিতে সর্বমোট ভাগ হবে ৭টি তার মধ্যে আমাদের ভাগ ২ টি। সেহেতু প্রতি ভাগিদার থেকে একজন করে মানুষ নামার কথা। কিন্তু সকলে আসেনা। আমাদের দুইটি ভাগ থাকায় আমার দুজন চাচা মাছ ধরতে নেমেছিল।
প্রথমের দিকে বেশি মাছ পাওয়া যায় না কারণ উজানের দিকে মাছ খোঁজা হয়। এরপর ধীরে ধীরে মাঝের মাছগুলো খোজা হয়।

IMG20211218120556.jpg
উপরের ছবিটিতে দেখতে পারছেন এটা হলাম আমি। পুকুরে মানুষ মাছ ধরতেছে এবং পুকুরের চারপাশে কিছু ছোট বাচ্চা হয়েছে। এরা মূলত গ্রামের ছেলে পেলে এরা মাছ ধরবে জন্য এখানে এসেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে প্রথমে পুকুরে নামতে দেই না কিন্তু তারা বিভিন্ন উপায়ে মাছ নেয়।
যাই হোক তারা হল বাচ্চা মানুষ তাদেরকে আটকানো সম্ভব না, তারা মূলত এটা মজার ছলে উপরে থাকে অথবা পারিবারিক সমস্যার কারণেই করে থাকে।
এরপর মাছ পাওয়া শুরু হলো দেখুন আপনারা কিছু মাছের ছবি।

IMG20211218112217.jpg
এখানে দেখুন এই ছবিটি আমি প্রথমের দিকে তুলে ছিলাম তখন গড়াই মাছ তোলা হয়েছিল। যদিও আগে অনেক মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, শেষমেষ এটি পুরোপুরি গড়াই মাসে পূর্ণ হয়েছিল।

IMG20211218114852.jpg
এই ছবিটি দেখতে পারছেন,এগুলো হলো গুড়া মাছ, এগুলো আমরা একটি ভাগে পেয়েছিলাম।

IMG20211218112717.jpg

এখানে দেখুন মাছগুলো ধৌত করে ভালো করে পরিষ্কার করে জমা করা হচ্ছিল। মূলত দিঘির পাশেই মাছ ভাগ করার জন্য এভাবে জায়গা করা রয়েছে।

IMG20211218123147.jpg
শুধু মাছ উপরে আনলেই হয় না, এগুলো ভাগ করা হয়, কেননা এই মাছ গুলোর সাতটি ভাগ হবে।
এই মাছগুলো আলাদা করা হয় যাতে করে সবার সব ঠিক ভাবে ভাগ হয়।
এখানে একটি কার্প মাছ ,গড়াই মাছ,শিং মাছ, টেংরা মাছ,শৈল মাছ, পুঁটি মাছ প্রভৃতি মাছ ছিল।
এরমধ্যে শৈল মাছগুলো ই অধিকাংশের আশা।এছাড়া অনেক পরিমান গড়াই মাছ পাওয়া,যেটাই ছিলো সবার আশা।শিং মাছের কাটা অনেক শক্তিশালী এই মাছটা কেউ ধরতে চায় না,আমি এই মাছ বাছা-বাছির কাজে ছিলাম ,ফলে আমার হাতে একটি শিং মাছের কাটা ঢুকে ছিল এবং রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় বার শিং মাছের কাটা লাগা। এতে রক্ত থামতে চায় না এবং হাতে প্রচন্ড ব্যাথা হয়।

একটা বিষয় বলে রাখি ,এই সাতটি ভাগের পরে আমাদের বাসায় যাওয়ার পর সেখানে আবার সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়, কেননা আব্বুরা সাত ভাই। তো তার একভাগ আমরা পেয়ে থাকি।
এটাই হলো মূলত কষ্টের ফল।

IMG20211218140633.jpg

এই ছবিটিতে দেখতে পারছেন ,প্রতি ভাগের লোকেরা তাদের বালতি,হাড়ি,ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছেন।

IMG20211218140828.jpg
অবশেষে ভাগ শুরু হলো। একজন লোক দায়িত্ব নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ভাগ করে দেন। আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ রাখিনা। কারণ তিনি দক্ষ এবং আমাদের ভাগিদার একজন।
মানুষের ভুল হতেই পারে,মানুষ মাত্রই ভুল। এটা নিয়ে কারো অভিযোগ রাখা উচিত নয়। উনিশে দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করছেন এটাই আমাদের জন্য অনেক।

এবার দেখুন সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত দীঘির জলের মাছ মারার।

IMG20211218134551.jpg
এটাই হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত এই মুহূর্তটা দেখার জন্যই আমি দীঘির জলে মাছ ধরা দেখতে যাই। এই সময় এলাকার মানুষকে,বাচ্চাদেরকে আটকানো সম্ভব হয় না ,কারণ মাছ একেবারে শেষের দিকে ,তারা চায় যে কিছুটা হলেও মাছ পেতে।উপরের ছবিটিতে দেখতে পারতেছেন এই সময় সবাই নেমে পড়েছিল পুকুরে , আমার চাচারাও পুকুরে ছিল সে সময়।

এটাই ছিল আজকের আমার ব্লগ।
আমি উপরের ব্লগ টিতে আমার গ্রাম বাংলার দৃশ্য ফুটে তুলেছি। আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।



0
0
0.000
1 comments