নদীর পাড়ের সাক্ষাৎ !

avatar

অসুস্থতা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছি , হাঁটাচলা করতে পারি কিছুটা ।অনেকদিন আকাশও দেখিনি ! আজ আকাশ সুন্দর । সুন্দর সুন্দর মেঘরাশি উড়ে বেড়াচ্ছে ।ভালো লাগছে দেখতে ।আকাশে এমন সুন্দর সারি সারি মেঘ আসলে অলোক আমাকে শাড়ি পরে বের হতে বলতো ।অজান্তেই আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে এমন মেঘমন্ডিত আকাশে শাড়ি পরার ।

আলমারির সবচেয়ে সুন্দর শাড়িটা বের করে খানিকক্ষণ একমনে তাকিয়ে রইলাম আজ।এই শাড়িটার মতোই আজকের দিনটাও অসম্ভব সুন্দর।অজানা এক কারণেই আজ দিনটা সুন্দর ! ঠিক যেমনটা আমার পছন্দ।হালকা রোদ,মিষ্টি বাতাস চারিদিকে,আর ঝকঝকে আলো।কিন্তু আজকে আমার মন অন্ধকার।তাই বাইরের আলোকোজ্জ্বল দিনটাকেও হয়তো খানিকটা ফ্যাকাশে লাগছে!

হালকা মেরুন রঙের শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিলাম তার সাথে একটা ঝুমকা আর মেরুন কাচের চুরি।কি যে অপূর্ব লাগবে নিজেকে সেটা হয়তো আমি নিজেও জানিনা!

InShot_20220630_201531973.jpg
নাহ ! শাড়ি পরলাম না । মেস থেকে বেরিয়ে কিছুটা পথ হাঁটলেই নদীর পাড়, নদীর পাড়ে এসে বসে রইলাম ,এই জায়গায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিগুলো তৈরি হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে একজনের হাত ধরে।

শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন আমি আসার আগেই অবশ্য অলোক এসে অপেক্ষা করছিল।আজকে জায়গাটা খালি থাকলেও সেদিন আমরা একে অপরকে দেখতে এসেছিলাম ! সেদিন আমরা একজন আরেকজনকে দেখে হাসিনি ।শুধু চুপচাপ বসে ছিলাম দুজন।কিছুক্ষণ বসার পর সেদিন অলোক বলেছিলো
-আমি উঠি।
-আচ্ছা।
-আর কিছুক্ষণ থাকতে বলবে না?
-সে-ই অধিকার তো আমার নেই!
-হুম,,,তাই তো!
অলোক উল্টোদিকে হাঁটতে লাগলো।একবারের জন্যও পেছনে ফিরে তাকালোনা সে।আমার ভালো লাগছে এটা ভেবে যে অলোক সুন্দর একটা জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।সুস্থ একজন জীবনসঙ্গী ও পেয়ে যাবে আমি এই কামনা করি।

কিন্তু সেদিন অলোক কেঁদেছে ,ভীষণ কেঁদেছে ।কারণ সে জানে এই পৃথিবীতে আমার মতো করে তাকে কেউ কখনও বুঝবেনা!

আমরা সব বুঝেও দুইজন দুইজনের বিপরীতে হাটছিলাম ! হয়তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশান্ত বিচ্ছেদের সাক্ষী হয়ে, হয়তো অনেকগুলো না বলা কথার প্রতিধ্বনি হয়ে, হয়তো হাজার বারের অপ্রকাশিত ভালোবাসার সুর হয়ে!আমরা আলাদা হয়ে গেলাম ।

আমি আজ যেমন এই জায়গায় এসেছি আমি জানি অলোকও আসে ।হয়তো অঝোরে কান্নাও করে ও । আমি জানিনা আসলে ।কিন্তু আমার মন বলে ।এই জায়গায় আসলে আমি অলোকের সান্নিধ্য পাই কিভাবে যেনো ।

অনেক আগে আমি অলোককে বলেছিলাম ,"প্রস্থান যেন হয় নিরবে , নিভৃতে, কাওকে না জানিয়েই।" বাস্তবে এমনটাই হলো !

বিপুল ভালোবাসা নিয়েও বিচ্ছেদ ঘটে ।পরিবার এর জন্য সুস্থতার জন্য ! সবাই শারীরিক সুস্থতাই বুঝে কিন্তু কেউই মানসিক সুস্থতা বুঝে না। আমি আর অলোক বুঝে গিয়েছি। নিজেদের বুঝ দিয়েও দিয়েছি ।

হয়তো বছর বছর পার হয়ে যাবে আমাদের আর দেখা হবেনা। আমাদের পরিবার ভালো থাকুক এই কামনাই করেছিলাম আমরা। ও গ্রাজুয়েশন শেষ করে ওর দেশে ফিরে যাবে।আমি হয়তো থাকবো এই দেশেই ।আফসোস , এই নদীর পাড়ে আমি হয়তো বহুবার আসবো , অলোকও বহুবার আসবে , আমাদের আর এই নদীর পাড়ে বসা হবেনা ।

আজকের মতন বিদায় নিচ্ছি , লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ , নিরাপদ থাকবেন , আশা করছি ভালো থাকবেন৷



0
0
0.000
2 comments