মুক্তির অপেক্ষায়...

avatar

পৃথিবীর বুকে মানুষের পথচলাকে কি সমুদ্রের ঢেউগুলোর সাথে তুলনা করা যায়? এভাবে ভেবে দেখেছেন কি কখনো, জীবন যেখানে নিত্য প্রবাহমান তার সুরে যে গান ধ্বনিত হয় প্রানের মাঝে, সাগরজুড়ে অগাধ জলরাশিতে তার প্রতিধ্বনি আকাশ বাতাস জাগরিত করে রাখে। তাইতো, চাতক পাখির মতো একটু শান্তি প্রত্যাশী মানুষ দিগ্বিদিক ছুটে এ সমুদ্রের তটরেখার কিনারায়, বালুরচরে গহীনে যেখানে নোনাজলের ফেনারা এসে তীরে ভীড় করে, সূ্র্যের রৌদ্রস্নানে হৃদয় জুড়ায় প্রানখুলে - সমুদ্র কি প্রাণকে টানে ভীষনভাবে?

Source

মানুষের চরিত্রগুলোর হঠাৎ করে বদলে যাওয়া এখন আর তেমন করে মনে রেখাপাত করে না, ঠিক যেমন প্রথম দিনের চাপা বেদনা সারা মনপ্রানকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমার নিজ বাসভূম থেকে। কিছু ব্যাথা ঠিক সময়ের সাথে সাথে সয়ে যায়, এ যেন বিষকে বিষের প্রবাহ দিয়ে সারিয়ে তোলা, অনুভবের দিকটায় একটা বোধশক্তি হ্রাস পেয়ে বসা। জীবনের পরতে পরতে ছোট বড় ব্যাথা, চিরদিন থাকবেই - তবে ক্ষুদ্র জীবনের গন্ডিতে কিছু বেদনা বেশ দীর্ঘকাল ধরেই থেকে যায় - সময় পেলেই স্মৃতিপটে ভেসে আসে, মনকে রাঙিয়ে দিয়ে যায়।

কারো জীবন থেকে কেউ চলে যাবার আগে চরিত্র প্রথমে বদলে যায়, তারপর মন, হৃদয়, একসময় পুরোপুরি আনাগোনা স্তিমিত হয়ে যায়। চরিত্রের বদল হওয়া যেন আকাশের রং, ক্ষনে ক্ষনে একরুপ থেকে অন্যরুপে, এভাবে সবচেয়ে কাছের ব্যাক্তিটিও দূরে সরে যায়। সবকিছু যখন বদলাচ্ছে তখন কিছু মানুষ বদলাবে না, তা কি করে হয়?
কাছেপিঠে থাকা কাউকে হারিয়ে যখন মন ভাবতে বসে সে মানুষটি কেন হারিয়ে গেল যখন দীর্ঘ যাত্রার সবে সে শুরু ছিল, অনেক পথ হাঁটা বাকি ছিল - সে সবই বিষম ঝড়ের তোড়ে পড়া কুপিবাতির মতো নিভে গেল।

মানুষ ইচ্ছে করলেই নিজের মতো করে ভাবতে পারে, তবে কেউ যদি চায় সে আর থাকবে না পুরাতন ঘটনায় - তাহলে কে আর আটকাতে পারে? ইচ্ছার সাথে যখন চরিত্র পাল্টাতে শুরু করে, ভাঙনের তখন শুরু, একেবারে বিলীন হয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত চলতে থাকে তার খেলা। কোনো একদিন এই ভাঙার গানের শেষ এসে পড়ে - ততদিনে সময় অনেক পার হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়ে কারো হৃদয় স্থির হয়তো থাকে না, অল্প কিছুকাল বিরাগের রাগে অন্তর কেঁপে ওঠে, সাময়িক সময়ের জন্য - একসময় সে রাগে ভাটা পড়ে,জোয়ার নেমে গেলে।

বেদনার রেশ সবসময় একই রকম থাকে না,যে ব্যাক্তিটি কষ্টের বানে বিদ্ধ করলো, তাকে জীবনের কোন না কোন সময় ক্ষমা করে দিতেই হয়। ভালোবাসার শেষ সে যদি ঘৃনায় শুরু হয় তাহলে তার সমাপ্তিতে ক্ষমা এসে প্রশমিত করে দিয়ে যায়, যা কিছু বেদনার তার ভেতরে কিছু প্রশান্তিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়।

চারপাশের পরিবেশে ঠিক এমন সময় এসে পৌঁছায় যখন জীবনের তাগিদ মানুষকে নতুন গন্তব্যে নিয়ে যায়। এটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়।আমার জীবনে এ উপলব্ধিটির প্রমান প্রথম যখন পেলাম তখন সবে শুরু হলো পথচলা। একটি বন্ধু যে খুব নিয়মের মধ্যে থেকে বেড়ে উঠেছিল, কিছুদিন নিজের স্বাধীনতায় থাকার পর তাকে বদ অভ্যাসে আকৃষ্ট করলো, এবার শুধু পথ হারানোর বাকি।যখন থেকে সে একাকী পথ চলতে শিখলো, এরপর থেকে জীবনের নিগূড় স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলো।

Source

সঙ্গদোষে সর্বনাশে, এ কথাটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই বোধ করি প্রযোজ্য। সে বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়লো,খারাপ অভ্যাস যেটা সে নিজে শেখে নি ; তার বন্ধুরা তাকে শিখিয়েছে - এভাবে সে বিপথে যেতে শুরু করলো। পূর্ণ স্বাধীনতার আগে সে শুধু নিজেকে গুটিয়ে রাখতে জানতো, কম সঙ্গলাভ করতো, আমি তাকে সঠিক পথে চলার জন্য পরামর্শ দিয়ে যেতাম, জীবনের কিছু জিনিস এড়িয়ে চলতে বলতাম।

সব মানুষ সমসময় তার প্রিয়জনদের সাথে থাকতে পারে না, ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক নিয়মে আলাদা পথে সেও ভ্রমন করা শুরু করলো, আমিও আমার পথে। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে এসে বহুদিন পর তার সাথে দেখা হঠাৎ করে।তখন আর আমার দেখা বন্ধুটি আগের মতো নেই, সে বদলে গেছে, অনেকখানি। তাকে আর দূর থেকে দেখলে চেনা যায় না ; একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পরিচর্যারত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পর ও প্রায় পুরোপুরি ভালো হয়ে উঠলো, একদম পুরনো সে ভালো ছেলের মতো।

তারপর দিনের কাজের শেষ একদিন তাকে ডেকে এনে চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পুরনো দিনের সেসব কথা মনে করতে বললাম, ভাবতে বললাম -এতগুলো বছরের পর তার নিজ দোষগুলোকে কেন এতটা প্রশ্রয় দিলো, নানা প্রশ্ন করলাম। একসময় সে তার ভুল বুঝতে পারলো, নতুন করে শিখলো যে, চলার পথটা কতখানি উঁচুনিচু - একদিন না একদিন অনুভূতি পেয়ে বসে, যখন বুঝতে পারে, ততদিনে সময় অনেকখানি গড়িয়ে গেছে।

শেষ বিকেলবেলায় বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবলাম, একসময় সবকিছু ক্ষয়ে যায়, মানুষ এই ছলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়, আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। ক্ষমা গুনটির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, এখনো যে একজন মানুষকে ক্ষমা করা বাকি,যদি তাকে ক্ষমা করতে পারি, তাহলে মুক্তি মিলবে, সে মুক্তির অপেক্ষায়.. |



0
0
0.000
3 comments
avatar

কারো জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগে প্রথমে বোধহয় রুচিবোধটা বদলে,অবশ্য রুচিবোধতো এক প্রকার ইচ্ছাই,সেই হিসাবে ইচ্ছেটা বদলে,তারপর সেই অনুযায়ী আচার আচরণ আর অবশেষে ভাঙন....

0
0
0.000
avatar

সব মানুষের বেলায় একই নিয়ম খাটে না সবসময়, তবে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবর্তন হয়, যেভাবে সূত্রপাত তেমনিভাবে পরিণতি আসে।
ধন্যবাদ।

0
0
0.000