বেখেয়ালী...
Source
কারো জন্য যদি মনে ব্যাথা অনুভব, সে এ ধরনীতে থাকুক বা অন্য কোথাও - বারেবারে সে চোখের দেখার মোহ, হঠাৎ নিজেকে হারিয়ে ফেলা, ঝড় কিংবা বাদলার দিনে, সূর্যের দাহে ঘেমে একাকার, শত কষ্টক্লেশ, বেদনার শহরে পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে ব্যার্থতার দুফোঁটা অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে বাড়ি ফেরা ; দিনের শেষে যখন সবাই ছুটছে নিরন্তর - তারই কোন এক প্রহরে তাকে মনে করে ভালোলাগার অনুভূতি ; সে যতকাল রবে, ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।
এ জীবনে কিছু কিছু সময়ের পরিক্রমায় নিজের মনটা হুট করে খামখেয়ালী হয়ে ওঠে, যার কথায় প্রকাশ হয়তো দুরুহ ব্যাপার ঠেকে, কিন্তু সামান্যে কি তার ঘোর কেটে যায়? ভাবার সময় হয়ে ওঠে না তার জন্য, যে কোন এক দিনে যখন নিজের মনের ঘরের খুব কাছে চলে এসেছিল, ভীষন একাকীত্বের হতাশায়, কোলাহলের নিষ্প্রাণতায় যখন বিষিয়ে উঠেছিল তাবৎ হৃদয়পটের গহীন সে ভাব, যে ধোঁয়ার বিহ্বলতায় নিজের সঙ্গী হয়ে রইলো নির্নিমেষ পথচলায়, তার সাথে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত যেন বলছিল, চিরকাল এভাবেই থেকো, কিন্তু তা তো হবার নয়।
কেউ কারো প্রতি টান অনুভব করে, অন্যদিকে সে হৃদয়টিও কি তা বুঝতে পারে? কোনকালেই মনে হয় নি, সমানতালে পৃথিবীর ছুটে চলার মাঝে অল্পের দেখায় তাকে ভালোবেসে ফেলা যায়, সময় গড়ানোর ফুরসত পায় নি, ঐ মানুষটির অন্তরের চেহারা দেখা হয় নি, সুপ্তসলিলা যে নদী বয়ে যায় অনেকটা সময় ধরে, তারপর কোনো রাখালের গরু তার পাশ ধরে হেঁটে যায় - এভাবে একটি দৃশ্যপট গড়ে ওঠে। বেশ খানিকটা সময় ধরে পরীক্ষা করেই যেমন একটি বইয়ের মাহাত্ম্য বোঝা যায় ; কিন্তু সে অল্পের চোখের দেখায় নয়নতারায় জেগে থাকে - সে প্রানের মাঝে মিলিয়ে থাকে।
সেদিন ভারী ঝিরিঝিরি বাতাস বইছিলো, সবুজ ঘাসের কাছে কাঠবিড়ালিরা বাদাম মুখে নিয়ে ছুটছিলো, তার পাশে হাসনাহেনার সুঘ্রাণে সুরভিত মুহূর্তটা বলছিলো, সময়টাকে ধরে রাখো, হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে এমন একজন যে কখনোই চোখের দেখায় হঠাৎ করে তোমার কাছে পর মনে হবে না, মনে হবে না সে পথচারী, দূরের কেউ, কাছের একজন ব্যাক্তি যে তোমার হৃদয়ে গাওয়া সঙ্গীতের প্রথম দুটো লাইন। এভাবেই সে ধরা দিল আকাশের নিচে, ভীড়ের মাঝেও তাকে চিনি,অন্ধকারেও সে আলোকিত থাকে।
পরিচয়ের রেশ না ফুরাতেই কুসুম কাননের পথ ধরে হাঁটা, পাখির কলকাকলিতে মুখর পুরোটা উদ্যান, এ জীবনে মনে হয়ে ওঠা, বুঝি দীর্ঘ কষ্টের মাঝে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া, একাকী জীবনে সে হঠাৎ এলো, ঘোর কেটে যায় - রেশও ফুরিয়ে যায়,আর সে সময়ও হারিয়ে যায়। তাকে একবার বিদায় বলে দেওয়া হলো, হয়তো কোন একদিন আবারও দেখা হয়ে যাবে,হয়তো হবে না, সংশয়ের এ দোলাচলে নিভে যাওয়া প্রদীপ যে ফুটে ওঠা বাস্তবতা, অনেকখানি ভালোলাগায় বাঁধা হয়ে থাকা, সে দেখার ইতি টেনে ফিরে চলা।
সকাল কি বিকেল, বারে বারে মনে হওয়া সে যেন হৃদয়ের শূন্যতাটাকে মুহুর্তে পূর্ণ করে দিল, মনের যে দিকটা খালি খালি ছিল তাতে একটা ভারী ভারী আমেজ এলো, মনে হওয়া যেন স্তম্ভিত নৌকায় হুট করে পালতোলা হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, দূরে -বহুদূরে। তার কথার আঘাতে না হারাতে পারলাম, না তার ঢলঢলে চোখের চাহনিতে মন জুড়োলো। কেন সে দূরে থেকে রইলো, তার হিসেব মেলাতে না পারার একটা চাপা ক্ষোভ মনে পড়ে রইলো।
অনিত্য সংসারে কে বা কতদিন কার খেয়াল রাখে? কে রাখে খবর, যখন মনে পড়ে - একটিবার এসে খোঁজ নিয়ে যাওয়া, ভালো আছে তো সে, যে প্রথম দিনের মাথায় আপন করে নিয়েছিল, দিয়েছিল একটি কবিতার বই -ভালোবেসে হয়তো, নয়তো এমনি খুশিমনে। যদি সে একবার এসে দেখে যেত, তার কথা এখনো মনে পড়ে, চোখের কোনে বিন্দু একফোঁটা জল জমে, সে অচিরেই শুকিয়ে যায়। স্মৃতিতে একটি ছবি কতদিন বেঁচে থাকে, তা তো হারিয়ে যায় না সহজে। যে পথের শুরুতে দেখা, সে পথটা তো আজো আছে, শুধু সে নেই। দূরের থেকে কত কেউ ভেসে আসে, মন পড়ে রয় - হয়তো সে আসবে ভীড় হতে।
এভাবে সময় চলে যায়, কত কি ঘটে চলে। কারো স্বল্পের স্মৃতি মনে করে দিন পার করা, এরকম দিনে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার মাঝেই তো সময় কেটে যায়। একটি জীবন, সে খুব বেশি কিছু নয় পার করা, ইচ্ছাগুলোকে বিসর্জন দিত শেখার মাঝে মহৎ কিছু খুঁজে পাই। কফির এক কাপ সে রংয়ে ধরে রাখা তার হাসিটা, দিনের শেষে যখন কফির ধোঁয়ায় তাকে দেখতে পাওয়া, বুঝি আর কোনদিন সে আসবে, সেদিনের মতো হাসবে আর আমি তফাতে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে রইবো, এভাবে দিন চলে যাবে,সে দিনটি কি আর আসবে?
ভালোবাসার অনূভুতিই অন্যরকম,ঐ অবস্থায় পুরো পৃথিবীটাই পরিবর্তন হয়ে যায়,সবকিছুই ভালো লাগে,
আবার যখন অনুভূতিটাই আঘাত লাগে তখন আবার পৃথিবীটা অসহ্য হয়ে পড়ে।
খুব ভালো লিখা।
ধন্যবাদ।
মূল দিকটা সেটাই যেটা এ বিশাল মনস্তাত্ত্বিক আবেগের মধ্যে ভালোবাসা নামক মহৎ দিকটি প্রধান হয়ে ওঠে, এটা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিভেদে আলাদা, এর অনুভূতির প্রকাশটাও বিচিত্র৷
মূল বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য ধন্যবাদ। দোয়া রইলো।
,