পথের গভীরে..
কোনো একটি পথ ধরে বেশ কিছুদূর গিয়ে মনে হয় সে পথটি যেন শেষ হবার নয়, একটি আফসোস, একটি হা-হুতাশের চোরাস্রোত বয়ে যায় সারা শরীর বেয়ে,অসম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা ; না জানি এ পথ তার শেষের দেখা পাবে না।
খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দ্বিধার হলকা মন্ত্রনা দিয়ে যায় যেন দূকদম এগিয়ে গিয়ে চার কদম পিছনে ছুটে ফিরে গিয়ে দুনম্বর রাস্তাটা ধরে এগিয়ে গেলে বোধহয় সঠিক পথের দেখা মিলবে, কেউ সিদ্ধান্ত খুব সহজে নিয়ে নেয় - কেউ সময় নেয়।শেষমেষ দু ক্ষেত্রেই সীমারেখার টান এসে উপস্থিত হয়।
Source
বয়সের সাথে সাথে মনের ভিতরকার স্থিতধী খুব রহস্যময় অভিসারে পাল্টে যায়, উন্নত এক দীক্ষার স্তরে যেখানে আগের অতীতের ভুলগুলো সঠিক একটি রূপ ধারন করে যা আদৌত অপরিপূর্ণ মনে হলেও এমন একটি নিবিড় ক্ষেত্রে নিয়ে যায় যেখানে মনের চিন্তারা এলোমেলো ভাবনাগুলোকে বিন্যস্তভাবে দেখতে পায়।দিনের বেলায় যদি চিন্তায় ডুবে থেকে স্বপ্নরা বীজ বোনা শুরু করে, তাহলে রাতের তারারা মিটিমিটি জ্বলে নিভে যায়,সদা এক আলোক জগতের থেকে দূরে,বহুদূরে।
ব্যস্ততা সে দিনের আরম্ভে শুরু হয়ে রাতের অন্ধকার যখন সবগুলো দৃশ্যকে, রংকে, আলোকে, স্বপ্ন নির্মাণকে ঢেকে দেয় কালো এক চাদরে ; যেন ঢল নামা কোনো রৌদ্রমাখা এক পাখি উড়তে উড়তে নীড়ে ফেরার আগে নিজের ছায়াটাকেও দেখতে পায় না, দিনের তপ্ত গরমে ঘেমে রাতের পুঞ্জীভূত শীতলতার এক করাল গ্রাসে সতেজ এক প্রান ফিরে পায়, তেমনি করে শোরগোলের পাটকাঠি চুকিয়ে, লেনাদেনার ভীড়ে শেষকালে যখন একাকী কোনো এক কোনে বসে দুদন্ড জিরিয়ে নিচ্ছি, তখন চোখ বুজে ঢেলান দিতেই ঢুলুঢুলু ঘুম এসে চোখকে স্পর্শ করলো।
পুরোটা দিন কাটলো কিছুটা সাফল্যে কিছুটা ব্যার্থতায়, কিছুটা আশায় খানিকটা হতাশায়, সচকিত ভাবনায় আর উদ্বেগের পরশে,কোথাও কোন রেশ ছিল না ভাবের অভাবের। মানুষ যেমনটা বলে কি পেলাম এতগুলো বছর ধরে নিত্যকাজে ডুবে থেকে, আমার থেকে তো ঐ পিছনের সারির লোকটি মহাসুখে আছে, একটি সুন্দর পরিপাটি পরিবার, সাজানো সংসার, নির্ঝঞ্ঝাট চলাফেরা আর নিশ্চিন্ত এক জীবনের অনাবিল আনন্দে কি মনোরম এক হাসি মুখে লেগেই আছে। বহুদিন ভেবেচিন্তে সুখের সন্ধানে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পথ ধরে এগিয়ে গেলাম, কিন্তু সে পথ যে আমায় নিয়ে গেল অতৃপ্তির শহরে, যেখানে ঠিক কখনোই যেতে চাইতাম না।
কিছু মানুষের মুখখানিই যেন তার মনের লুকানো কথাটি দেখিয়ে দেয়। অবশ্য সবটা আঁচ করা যায় না, তবে আন্দাজের পাশ কেটে এক টুকরো আতশি কাঁচের মতো যেমন অল্প দেখা অস্পষ্ট লেখাগুলো পরিষ্কার হয়ে ওঠে ঠিক তেমন কিছুটা সময় জুড়ে পার্কে বসে একাকী বাদামের খোসা ফাটিয়ে যখন উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের অংশটি পেটে চালান করে দিচ্ছিলাম,অপর পাশের সমান্তরাল বেঞ্চে বসা মধ্যবয়সী লোকটার মনের উঠোনো ঢুঁ মেরে আসতেই টের পেলাম সে চাপা হতাশাটি যেটি জীবনের কোনো এক অঙ্গে আলতারাঙা তেজে মনকে পুলকিত করে রাখে।
Source
না পাওয়ার বেদনা কখনো মনকে বিষিয়ে তোলে, কখনো মনকে এক অদ্ভুত আনন্দ দিয়ে যায়। কেউ লক্ষ্য করে, কেউ ঠিক দেখতে পায় না৷ একটি মানুষকে আপনজন কিংবা পর, সবাই ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না৷ পরিবারের মধ্যে কারো ব্যাক্তিগত ইচ্ছা, কিংবা সাধের দিকটি কেউ হয়তো বেখায়ালের বশে দেখে নিতে পারে না, কারন প্রায় সবাই নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। লোকটির অন্তর বলে উঠলো হতাশার আশ্রয়ে - আমার এ পৃথিবীর বন্ধুগুলো নিজ জীবনে কতটা সুখী,কখনো পথের কিনারে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাওয়া বন্ধুটি এখন মস্ত বড় এক কর্পোরেট, কেউ
ব্যবসা করে নাম কামিয়েছে, কেউবা অর্থলাভে একটি ঝকঝকে অট্টালিকা গড়িয়ে ফেলেছে। আমি কি পেলাম?
সম্ভবত এ প্রশ্নটির পর লোকটির আর কোন ভাবানুভব হয় না। এক নির্লিপ্ত দৃষ্টি, এক মুঠো ধোঁয়া ওঠা সিগারেটের ছাই নিচের ঘাসের ওপর পড়ে হালকা বাতাসে মিলিয়ে যায়। তবে হতাশার ব্যাকুলতাটা মুছে যায় না সহজে, কারন সে যদি স্বার্থান্ধ কিংবা ঈর্ষাপরায়ন নাও হয়, তারপরও তার পরিবারের সবটুকু দাবিগুলো না মেটানোর যাতনা অবশিষ্ট ঐ হতাশাটাকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চায় না। এভাবে আক্ষেপ দানা বাঁধে, সময়গুলোও নিম্নচাপে কেটে যায়, দিনে অথবা রাতে।
সন্ধ্যা নামছিল তখন, আর আমার বাদাম খাওয়াও শেষ হলো৷ এবার তবে বাড়ি ফিরতে হবে, পরিবারের সবাই তো আমার অপেক্ষায় বসবার ঘরে বসে আছে। বেঞ্চ থেকে উঠে একটু হাঁটা ধরতেই লোকটির চাপা ভাবনাটি আবার মনে আসতে লাগলো৷ তার কিছু ব্যার্থতা বুঝি সে সিদ্ধান্তের ত্রুটিদোষে, পথের ভুল করে চলতে হলো। কিন্তু ভুল তো মানুষেরই হবে। কিছুদূর আনমনে হেঁটে গেলাম। তারপর জারুল গাছটির নিচ দিয়ে নার্সারির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঐ লোকটির মতো আমাকেও দ্বিধায় ধরে বসলো। হায়! আমিও যে ভুল রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম এতক্ষণ, খেয়ালই করি নি!
তারপরে মনে নতুন এক ভাবনা এলো। কি পেলাম কি হারালাম, এই চিন্তার দুশ্চিন্তায় বেলা বসে হিসেবের খাঁতায় আঁকিবুকি করার কোনো মানে নেই, নিরর্থক। সুখ যদি পেতে হয়, তাহলে দেনাপাওনার পাঠ চুকানো শিখতে হবে,তবেই দেখা পাওয়া যাবে একটি নির্মল মনের যেটি দীর্ঘশ্বাসের স্বল্পব্যবহার করে,ঘরে কিংবা বাইরে..।
ধন্যবাদ।
500 HP | 1000 HP | 2000 HP | 5000 HP | 10000 HP | 15000 HP | 20000 HP |